শীত তো প্রায় দোরগোড়ায়। তাই এখন থেকেই যদি গোড়ালিকে একটু সাবধানে না রাখা যায়, তাহলেই বিপদ! সেক্ষেত্রে পায়ের এই অংশে বিশাল বিশাল ফাটল তো ধরবেই, সেই সঙ্গে যন্ত্রণাও যে খুব একটা কম হবে না, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।
আজকাল বাজার ছেয়ে গেছে নানা ধরনের ফাটাল বন্ধের ক্রিমে। তার কোনও একটা লাগালে ফাটা গোড়ালি জুড়ে যাবে ঠিকই, কিন্তু কতদিন তা ঠিক থাকবে, সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। আর পয়সা যে খুব একটা কম খরচ হবে না, তা হলফ করে বলতে পারা যায়। তাই তো এই প্রবন্ধে এমন কিছু ঘরোয়া উপায় সম্পর্ক আলোচনা করা হল, যা নিয়মিত মেনে চললে আগামী শীতে গোড়ালিকে নিয়ে আর কোনও চিন্তাই থাকবে না। গোড়ালির যত্নে যে যে ঘরোয়া উপাদানগুলি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে, সেগুলি হল-
১. আদ্রতা জরুরি:
পায়ের এই অংশে কোনও অয়েল গ্ল্যান্ড নেই। তাই গোড়ালি আদ্রতা হারিয়ে ফেটে যেতে শুরু করে। শীতকালে শরীর যেহেতু আরও আদ্রতা হারিয়ে ফেলে, তাই গোড়ালি ফাটতে সময় লাগে না। তাই বছরের এই সময় বেশি করে খেয়াল রাখতে হবে, যাতে গোড়িলি তার আদ্রতা না হারায়। আর এই কাজটি করবেন কিভাবে? খুব সহজ।
অফিস থেকে বাড়ি ফিরে ভাল করে পা ধুয়ে নিয়ে পছন্দের কোনও ময়েসচাইজার লাগিয়ে নেবেন। তাহলেই কেল্লাফতে!
২. মধু এবং পানির যুগলবন্দি:
এই দুটি উপাদান শীতকালে গোড়ালিকে সুন্দর এবং আদ্র রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে মধু এখানে প্রকৃতিক ময়েসচারাইজারের কাজ করে, যেখানে পানি, ত্বকের উপরি অংশে জমতে থাকা মৃত কোষেদের মেরে ফলতে শুরু করে। ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা তো কমেই। সেই সঙ্গে ফাটা গোড়ালি জুড়ে যেতে সময় লাগে না। এক্ষেত্রে পরিমাণ মতো গরম পানিতে মধু ফেলে সেই জলে পা চুবিয়ে রাখতে হবে। প্রতিদিন এমনটা করলে দেখবেন সমস্যা কমতে সময় লাগবে না।
৩. লেবুর যাদু: সাইট্রাস ফলটির অন্দরে থাকা অ্যাসিডিক প্রপাটিজ গোড়ালির আশপাশের ফাঁটা ত্বকের পরিচর্যা করার পাশাপাশি পা যাতে কোনওভাবেই সংক্রমণের কবলে না পরে, সেদিকে খেয়াল রাখে। তাই শীতকালে গোড়ালিকে বাঁচাতে নিয়মিত এই ঘরোয়া চিকিৎসাটি করা মাস্ট! প্রসঙ্গত, এক্ষেত্রে কম করে ১০-১৫ মিনিট লেবু মেশানো গরম পানিতে পা চুবিয়ে রাখতে হবে। সময় হয়ে গেলে গোড়ালিটা ভাল করে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিতে হবে।
৪. হলুদ এবং তেল:
যেমনটা আগেও বলা হয়েছে যে গোড়ালিতে কোনও তৈল গ্রন্থি নেই। তাই নির্দিষ্ট সময় অন্তর গোড়ালিতে তেল লাগানোটা একান্ত প্রয়োজন। তবে শুধু তেল নয়, তার সঙ্গে যদি একটু হলুদ মিশিয়ে নিতে পারেন, তাহলে তা কথাই নেই। আসলে হলুদের মধ্যে থাকা একাধিক উপকারি উপাদান একদিকে যেমন গোড়ালির হারিয়ে যাওয়া আদ্রতা ফিরিয়ে দেয়, তেমন যন্ত্রণা এবং ফোলাভাব কমাতেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।
৫. কলা:
গোড়ালিকে আদ্র রাখতে এবং ফাটাভাব কমাতে কলার কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে। এক্ষেত্রে একটি কলা ভাল করে পিষে নিয়ে ফাটা জায়গায় কম করে ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখতে হবে। সময় হয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে জায়গাটা ধুয়ে নিলেই কেল্লাফতে! প্রসঙ্গত, কলার পেস্টটা ব্যবহারের আগে মনে করে গোড়ালিটা ভাল করে দুয়ে নিতে ভুলবেন না যেন!
৬. সুতির মোজার গরম নিন:
শীতকালে বাড়ির এদিক-সেদিক হাঁটা-চলা করার সময় ভুলেও খালি পায়ে থাবেন না। কারণ এমনটা করলে ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশনে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। তাই চটি পরতে যদি ইচ্ছা না করে, তাহলে সব সময় সুতির মোজা পরে থাকবেন। এতে একদিকে যেমন পা পরিষ্কার থাকবে, তেমনি গোড়িলি ফাটার আশঙ্কাও হ্রাস পাবে।
৭. পেট্রোলিয়াম জেলি:
গোড়ালির যত্নে পেট্রোলিয়াম জেলির ব্যবহার যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। তাই এই শীতকালেও পুরনো বন্ধুকে ছাড়া চলবে না। এখন প্রশ্ন হল কিভাবে পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করলে বেশি মাত্রায় উপকার পাওয়া যায়? এক্ষেত্রে প্রথমে ভাল করে গোড়ালিটা ঘষে নিতে হবে, যাতে মৃত কোষের স্থর সরে যায়। তারপর ভাল করে সারা গোড়িলিতে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে মোজা পরে নিতে হবে। সারা শীতকাল যদি এমনটা করতে পারেন, তাহলে গোড়ালিকে নিয়ে যে আর কোনও চিন্তাই থাকবে না।
No comments:
Post a Comment